রূপপুরকে হোয়াইট ওয়াশ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ফরিদপুর হাসপাতাল! সেখানে একটি পর্দা কেনা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়
রূপপুরকে হোয়াইট ওয়াশ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ফরিদপুর হাসপাতাল! সেখানে একটি পর্দা কেনা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়
হাবিব হাওলাদার: ক’দিন আগে সাড়া ফেলেছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিছানা-বালিশ আর কেটলির দাম। হরিলুটের আসর বসেছিল সেখানে, প্রতিটা জিনিসের দাম বাজারমূল্য থেকে কয়েকগুণ, ক্ষেত্রবিশেষে কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে হিসেব ধরা হয়েছিল, সেই মূল্যতালিকা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পরে সাড়া পড়ে গিয়েছিল, তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল বলে শুনেছি।
এবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে যেটা ঘটেছে, সেটার তুলনায় রূপপুর কাণ্ডকে শিশুই বলা চলে! ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি হেডকার্ডিয়াক স্টেথোসকোপের দাম দেখানো হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এরকম ৪টি স্টেথোসকোপ আনতে ব্যয় দেখানো হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। এরকম ১১৬টি যন্ত্র ক্রয়ে ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতেও নেয়া হয় অনিয়মের আশ্রয়।
মোট টাকার অঙ্কটা শুনলে আঁতকে উঠতে পারেন যে কেউ। ১৬৬টি যন্ত্রপাতির মোট বাজারমূল্য ১১ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা, অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিল দেখানো হয়েছে ৫২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, প্রায় ৪১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে মেডিকেলের অসাধু কর্মচারীদের পকেটে ঢোকার কথা ছিল এই টাকা।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল ২০১৪ সালে। অভিযোগ তদন্তে একাধিক কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমন রিপোর্টের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। টাকা পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মেসার্স অনিক ট্রেডার্স। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই অনিক ট্রেডার্সের নামে কিন্ত আগে থেকেই ঠিকাদারী কাজে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তবুও কেন এত টাকার যন্ত্রপাতি কিনতে তাদের সাথেই চুক্তি করেছিল ফরিদপুর মেডিকেল, সেটা বুঝে নিতে কষ্ট হয় না।
২০১১-১২ সালের দিকে এই অনিক ট্রেডার্সের দুর্নীতি আর অনিয়মের বুষিয়ে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে দুদকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মন্ত্রণালয়ও এই প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল তখন। কিন্ত ২০১৩ সালে ঠিকই তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের এই উন্নয়ন কাজের টেন্ডার বাগিয়ে নেয়, আর এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন সরকারের সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, যিনি সেসময়ে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
আইসিইউ কেবিনে দুটো বেডের মাঝখানে যে পর্দা দিয়ে আলাদা করে দেয়া হয়, সেই পর্দার দাম কি করে সাঁইত্রিশ লক্ষ টাকা হতে পারে, সেটার রহস্য দুনিয়ার কোন গোয়েন্দা বের করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এই পর্দা কি হীরে-জহরত দিয়ে মোড়ানো? তিন-চার হাজার টাকা দামের স্টেথেস্কোপের দাম কিভাবে সোয়া লাখ টাকা হয়, সেটাও একটা অমীমাংসিত রহস্য।
————————— হা বি ব , হা ও লা দা র
More News ()- Subscribe Our YouTube Channel :- Click Here
Facebook Profile :- Click Here
No comments